ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই নানা সময়ে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের কথা বলা হলেও এখনও পর্যন্ত সে পথে হাঁটেনি রাশিয়া। তবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ভাবনাও যে রয়েছে তাদের তা জানা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কথায়। ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে কখন ও কীভাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে আলোচনাও সেরে রেখেছেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গত মাসেই হয়েছে এমন আলোচনা, বার্তা সংস্থা বিবিসিকে যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন এমনটিই।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিবিএস নিউজকে রুশ কমান্ডারদের ওই আলোচনা সম্পর্কে বলেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে রুশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওই আলোচনা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অংশ নেননি বলে জানা গেছে।
এর আগে নানা সময়ে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার পারমাণবিক হামলা চালানোর প্রস্তুতির কোনো লক্ষণ দেখেনি তারা। তবে শঙ্কা থাকছেই। এ নিয়ে কথা বলেছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবিক। তিনি বলেন, ‘এই ঝুঁকি নিয়ে কয়েক মাস ধরে আমাদের উদ্বেগ ক্রমশ বেড়েছে। ’
সেই উদ্বেগ আরো বাড়ে পুতিনের দেওয়া গত সেপ্টেম্বরের ভাষণে। যেখানে তিনি পশ্চিমাদের বিষোদগারের পাশাপাশি বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের অধিকৃত এলাকাগুলো রক্ষায় সব কিছু ব্যবহার করবেন তিনি। ’
এর পরপরই রুশ কমান্ডারদের এমন আলোচনা উদ্বেগ বাড়ায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে। কেননা এ যুদ্ধে যে কোনো মূল্যে জয় চায় পুতিন। তবে সম্প্রতি যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ভাগ্য ক্রমশ দোদুল্যমান অবস্থায় চলে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার যে করবেন না তিনি তা বলা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে যুদ্ধে ‘ডার্টি বোমা’ ব্যবহার করতে পারে বলে ইউক্রেনের দিকে অভিযোগ রাশিয়ার। তবে রাশিয়ার এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে কিয়েভ। জানানো হয়েছে নিন্দাও। উল্টো তাদের দাবি রাশিয়া নিজেরাই এ ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এর আগে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় রাশিয়ার হাতে থাকা সব অস্ত্র প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। পুতিনের এমন ঘোষণার পর চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ‘ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন’ বা ‘সুনির্দিষ্ট কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ ব্যবহার নিয়ে ফের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
সাধারণত প্রচলিত বোমার চেয়ে এই ধরনের পারমাণবিক বোমা আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে। এ অস্ত্রের ব্যবহারে বিস্ফোরণস্থল থেকে অনেক দূর পর্যন্ত তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণ ঘটে ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক ক্ষতি হয়।
গত মাসের শেষ দিকে রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দায়িত্বে থাকা বাহিনীর মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন পুতিন। এটি দেখে মনে হয়েছিল বড় ধরনের কৌশলগত অস্ত্র দিয়ে শত্রুর পারমাণবিক আক্রমণের প্রতিশোধ নিচ্ছে। ওই মহড়ায় ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়।